Wednesday, July 29, 2015

‘কিপিং ছাড়ার প্রশ্নই ওঠে না’

Share it Please
ভাবনাটা ভালোই জেঁকে বসেছে তাঁর ওপর। দলের সুসময়ে মুশফিকুর রহিমের মুখে ভেসে বেড়াচ্ছে এক টুকরো কালো মেঘ! ব্যাটে বড় ইনিংস নেই অনেক দিন ধরেই। চোটের কারণে উইকেটের পেছনে দাঁড়ানোও হচ্ছে না নিয়মিত। সময়টা বড্ড খারাপ যাচ্ছে মুশফিকের। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজের হতাশা লুকালেন না বাংলাদেশ দলের টেস্ট অধিনায়ক।
বিশ্বকাপের দারুণ পারফরম্যান্স ধরে রেখেছিলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজেও। প্রথম ওয়ানডেতে সেঞ্চুরির পর ৬৫ রানের কার্যকরী ইনিংস। সিরিজের শেষ ম্যাচে অপরাজিত ৪৯। এরপরই খেই হারিয়ে ফেললেন মুশফিক। পাকিস্তানের বিপক্ষে খুলনা টেস্টের দ্বিতীয় দিনে পাওয়া আঙুলের সেই চোট যে তাঁকে এতটা ভোগাবে কে ভেবেছিল!
ব্যাট না হেসে ওঠার ক্ষেত্রে চোটকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করানো অযৌক্তিকই মনে হতে পারে অনেকের। মুশফিকও চোটকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাতে চাননি। তবে কখনো কখনো জানিয়েছেন, চোটটা বেশ ভোগাচ্ছে। ক্রিকেটে সামান্য চোটও অনেক সময় ব্যাটসম্যানদের বড় মানসিক বাধা হয়ে দাঁড়ায়। মুশফিকের ক্ষেত্রে কি সেটিই ঘটেছে?
উত্তরটা সঠিক না জানা গেলেও পরিসংখ্যান কিন্তু চোখে আঙুল দিয়েই তাঁর বেহাল দশা স্পষ্ট করছে। টেস্টে মুশফিকের সর্বশেষ ছয় ইনিংস-৩২,০, ১২,০, ২ ও ২৮। ওয়ানডেতে যে মুশফিক মানেই দারুণ ইনিংসের প্রতিশ্রুতি, সেই তিনি এ সংস্করণেও হয়ে গেলেন নিষ্প্রভ। ৬ ম্যাচে ২৩.২৫ গড়ে ৯৩ রান। সর্বোচ্চ ৩১। অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শেষ দুটি ওয়ানডেতে ব্যাট করতে হয়নি তাঁকে। ক্রিকেটের তিন সংস্করণ হিসাব করলে সর্বশেষ ১২ ইনিংসে একটি ফিফটিও নেই মুশফিকের। গত বছর আগস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের তৃতীয় ওয়ানডে থেকে এ বছর এপ্রিলে পাকিস্তান সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডে পর্যন্ত সব ধরনের ক্রিকেটে ২৫ ইনিংসে মুশফিকের গড় ৫১.৮৬। সেখানে সর্বশেষ ১২ ইনিংসে মুশফিকের গড়টা নেমে এসেছে ১৬.৯১-এ। এ সময়ে রান মোট ২০৩।
শেষ কটি ইনিংস দেখলে স্পষ্ট, থিতু হয়ে ফিরে আসছেন সাজঘরে। কখনো আউট হচ্ছে প্রিয় স্লগ সুইপেও। চট্টগ্রাম টেস্টের শেষ দিনেও বলেছিলেন, ‘যদি ব্যাটে বল না লাগত তাহলে ভিন্ন কিছু চিন্তা করতে পারতাম। সেটা তো ঠিকই আছে। কিন্তু ইনিংসটাকে বড় করতে পারছি না।’
আজও ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স নিয়ে কথা উঠল সংবাদ সম্মেলনে। হতাশা প্রকাশ করেই মুশফিক বললেন, ‘যেকোনো ব্যাটসম্যান কিংবা বোলারের ইচ্ছা থাকে দলের প্রয়োজনে অবদান রাখা। শেষ কটা টেস্ট যেভাবে চেয়েছি, সেভাবে খেলতে পারিনি। স্বাভাবিকভাবে সবার জন্যই এটা হতাশার। ব্যক্তিগতভাবে আমিও হতাশ।’
তবে মুশফিক আপাতত স্বস্তি খুঁজে নিচ্ছেন দলের সাফল্যে। দল যতই ভালো করুক, ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স ভালো না হওয়ায় একটা খচখচানি মনে কিন্তু থেকেই যায়। সেই অস্বস্তি দূর করতে মরিয়া মুশফিক, ‘দল ভালো খেলছে। এটা আমার জন্য স্বস্তির। আমি খারাপ খেললেও দল ভালো খেলছে, এ জায়গায় কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছি। তবে দলের জন্য শতভাগ দেওয়ার চেষ্টাই থাকবে। নিজের ইনিংসটা বড় করার চেষ্টা করব। যদি সেটা দলের উপকারে আসে।’
অস্বস্তি কেবল উইকেটের সামনে নয়, পেছনেও। তাঁর চোটের কারণে ভারতের বিপক্ষে ফতুল্লা টেস্ট, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়ানডেতে উইকেটরক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন লিটন দাস। চট্টগ্রাম টেস্টেও উইকেটের পেছনে ছিলেন লিটন। আগামীকাল থেকে শুরু হওয়া ঢাকা টেস্টেও উইকেটের পেছনে দেখা যাবে লিটনকেই।
বিষয়টা সাদা চোখে কোনো গুরুতর সমস্যা নয়। তবে গভীরভাবে দেখলে একজন নিয়মিত উইকেট রক্ষকের জন্য সমস্যাও বটে। বিষয়টি স্বীকার করেই স্বরূপে ফিরতে প্রত্যয়ী মুশফিক, ‘হ্যাঁ, কালকের ম্যাচেও উইকেটকিপিং করা হচ্ছে না। চেষ্টা করব ফিরে আসার। আমার প্রথম কাজই কিপিং। আঙুলের যে অবস্থা, এখনো শতভাগ সেরে ওঠেনি। তাড়াতাড়ি সেরে ওঠার চেষ্টা থাকবে। কেউ কি সহজে কিছু ছেড়ে দেয় নাকি? আমার তো প্রশ্নই ওঠে না। যদি দলের সমন্বয়ের কারণে হয় সেটা একটা ভিন্ন ইস্যু। ব্যক্তিগতভাবে ব্যাটিংয়ের চেয়ে কিপিং আমি বেশি উপভোগ করি। কাজেই এটা ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’

0 comments:

Post a Comment